বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন কোয়েলের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয়
জাপানি কোয়েলকে। আমাদের
জানা মতে জাপানেরই কোয়েল পালনে সবর্প্রথম গৃহপালিত করা
গৌরব অর্জিত হয়েছে।
কোয়েলের কয়েকটি জাত
নিম্নরূপ-
ব্রয়লার কোয়েলঃ মুরগির মতো কোয়েলের মধ্যে ব্রয়লার জাতের
কোয়েল আছে। এদের পালন করা হয় মাংসের জন্য্ । উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মাংসের কোয়ের হল: এদের মাত্র ৪৫-৫০দিন পালন করা হয়। আমেরিকান বব হোয়াইট কোয়েল,
হিন্দুস্থান স্বেত
বা ইন্ডিয়ান হোয়াইট, ব্রেস্টেড কোয়েল ।
লেয়ার কোয়েলঃ মুরগির মতো কোয়েলের মধ্যেও লেয়ার জাত বিদ্যমান। এই জাতের কোয়েলকে শুধু ডিম
উৎপাদন ও বংশ বিস্তারের
জন্য পালন করা হয়।
লেয়ার জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বংস হলো: ফারাও, ইংলিশ হোয়াইট, ম্যানচিরিয়াল গোল্ডেন, ব্রিটিশ রেঞ্জ ।
একটি পূর্ণবয়স্ক কোয়েল সবার্ধিক ৪ বছর
বেঁচে থাকে। একটি নারি
কয়েল জীবনদশায় অন্ততপক্ষে ৭৫০ থেকে
অনাধিক ১৩০০ ডিম
প্রদান করে
থাকে।
কোয়েলের ডিম:
ডিমের ওজন: থাকে
৯ শুধুমাত্র কিছু প্রজাতির কোয়েল সাদা
রংয়ের ডিম
পাড়ে। তাছাড়া বেশির ভাগ
কোয়েলের ডিম
বাদামী এবং
গায়ে ফোঁটা ফোঁটা দাগ
আছে। থেকে ১৫ গ্রাম। ডিমের ওজন
স্ত্রী কোয়েলের দৈহিক ওজনের ৮%। ডিমের রং: কোয়েলের ডিম দেখতে খুব সুন্দর বাহারি
ছিটেফোটা । ডিমের খোসার ওপর
নীলচে, বেগুনীয়া, খয়েরি এবং
কালো পাঁচমিশালী রঙ্গের ছোট ছোট
ফোটা বা
ছিটা ফোটা
দাগ থাকে।
বংস বিস্তার:
কোয়েলের প্রতিটি ডিমই হতে পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা
আশা করা যায়। অর্থাৎ প্রতিটি ডিম
থেকেই একটি
বাচ্চা ফুটতে পারে। তবে
বাচ্চা ফোটার জন্য ডিম
তৈরি করতে
হলে একটি
পুরষ কোয়েলের সাথে তিনটি স্ত্রী কোয়েলকে কিছুদিন একসাথে রাখতে হবে।
কোয়েলের ডিম
থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য
ইনকিউবেটর মেশিন ব্যবহার করা হয়।
যাদের ইনকিউবেটরন নেই সেই ক্ষেত্রে আমরা দেশি ছোট মুরগির দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে থাকি। ডিম
থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৭
থেকে ১৮
দিন সময়
লাগে। তবে
বাচ্চা ফোটার পরই সেগুলো পরিবেশের সাথে
মানিয়ে নিতে
পারে না।
কারণ, কোয়েলের বাচ্চা খুবই
সংবেদনশীল। এরা
পরিবেশের সাথে
মানিয়ে নিতে
কমপক্ষে ১২
থেকে ১৪
দিন সময়
নেয়। এই
সময়টাতে বাচ্চার প্রতি অতিরিক্ত যত্নবান হওয়া একান্ত আবশ্যক। এইসময় বাচ্চাকে ব্রুডিং ঘরে
নিয়ে যাওয়া ভাল। কারণ,
সেই সময়
কৃতিম উত্তাপ প্রয়োজন হয়
বাচ্চার। ব্রুডিং পদ্ধতিতে বাচ্চার শরীর সেই
সময় গরম
করতে হয়।
কোয়েলের বাসস্থান
কোয়েলের বাসস্থান যাতে
প্রয়োজন মতন আলো
বাতাসের মধ্যে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখখতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে-বৃষ্টির পানি বা
অন্য কোন
তরলপদার্থ দ্বারা কোয়েলের খাঁচা ভিঁজে না
যায়।
খাঁচায় কোয়েল পালন করা সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। একটি
খাঁচার ওপর
আরেকটি খাঁচা এভাবে অল্প
জায়গাতে অনেকগুলো খাঁচা তৈরী
করে কোয়েল পালন করা
যায়।
আদর্শঃমাপ
** ১৩০:৬০:৩০ সেমি: দৈর্ঘ্য: প্রস্থ:উচ্চতা বিশিষ্ট একটি
খাঁচায় কমপক্ষে ৬০টি
কোয়েল পালন করা যায়।
** ১৫০:১০০:৪৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য:প্রস্থ:উচ্চতা বিশিষ্ট একটি খাঁচায় কমপক্ষে ৯০টি
কোয়েল পালন
করা যায়।
** কোয়েলের খাচায় ব্যবহৃত জালের ফাকগুলো একটু ঘন
হতে হবে।
যাতে করে
কোয়েলের মুখ
বা গলা
সেই ফাক
দিয়ে বাইরে বেরিয়ে না
আসে।
** বাচ্চা রাখার খাঁচাসহ / বয়স্ক কোয়েলের খাঁচাগুলোতে যেন
বেজি, কাঠবিড়ালী, ইদুর ইত্যাদি না প্রবেশ করতে না পারে, সেইভাবে খাঁচার শিকের ফাঁক বানাতে হবে।
*** কোয়েলের বাচ্চা পালনের সময়
একটি অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। এই
সময় বাচ্চাকে ব্রুডিং এর
ব্যবস্থা করতে
হয়। বাচ্চার বয়স ১৫
থেকে ২০
দিন কৃত্রিম উত্তাপের মাধ্যমে এই ব্রুডিং এর ব্যবস্থা করতে হয়।
কারণ, ডিম
থেকে ফোটার পর বাচ্চা উক্ত সময়
স্পর্শকাতর এবং লালাভূলা থাকে। এই
সময় বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় ক্যালোরিযুক্ত খাবারও দিতে হয়।
**সদ্যজাত বাচ্চা ক্যালোরির অভাবে শরীর
ঠান্ডা হয়ে
মৃত্যুর মুখে
ঢলে পড়তে পারে।
সাধারণভাবে বাচ্চা ফুটলে সেগুলোকে আলাদা খাঁচায় স্থানান্তর করা
উচিত। কারণ,
তাহেল বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় ব্রুডিং এর
ব্যবস্থা করা
সম্ভবপর হয়ে
থাকে। মুরগির বাচ্চার মতো
একই পদ্ধতিতে কোয়েলের বাচ্চাকে ব্রুডিং বা
কৃত্রিম তাপ
প্রদান করার
প্রয়োজন হয়ে
থাকে। বড়ো
আকারের কোয়েলের খামারে বাচ্চা রাখার জন্য
আলাদা ব্রুডার খাঁচা তৈরি
করা হয়ে
থাকে। যাতে
করে বাচ্চা ডিম ফুটে
বের হবার
প্রায় সাথে
সাথে সেই
খাঁচায় বাচ্চা স্থানান্তর করা
যায়।
মোটামুটিভাবে কোয়েল পালনের জন্য
এই ধরণের বাড়তি যত্ন
আর বাসস্থান প্রয়োজন হয়।
তবে হিসেব করে দেখা
গেছে ১০০০টি মুরগির জন্য
যে ধরনের ব্যাপক বাসস্থানের প্রয়োজন হয়-সেই ধরনের জায়গায় কমপক্ষে ৮০০০ থেকে
১০০০০ কোয়েল পালন করা
সম্ভবপর হয়ে
থাকে।
কোয়েল পালনের সুবিধা সমূহ
কোয়েল পালনের বিভিন্ন সুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হলো।
(১) সাধারণত একটি ভাল
জাতের কোয়েল বছরে ২০০
থেকে ২৫০টি ডিম প্রদানে সক্ষম হয়ে
থাকে। অনেক লেখক ৩০০ ডিমের কথা উল্লেক করে থাকেন। বাস্তবে তা
সম্বভ নয় । তারা হুজুকে বাঙালী নেট থেকে পরে বাঙলা করে চালিয়ে দেয় কিন্তু আমাদের দেশে সম্বভ নয়। প্রায় প্রতিটি
ডিম থেকেই বাচ্চা পাওয়া যায়। এই
বাচ্চা ৪৫ দিনে বা ৬ থেকে ৭
সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা
বিক্রির উপযোগী হয়। পাশাপাশি ডিম দেয়া শুরু করতে
পারে।
(২) অত্যন্ত কম পুজি
নিয়ে কোয়েলের খামার তৈরি
করা যায়।
(৩) কোয়েল দিনে মাত্র ২০ থেকে
২৫ গ্রাম খাবার দিলেই এরা এদের
শারীরিক চাহিদা মিটাতে পারে।
(৪) কোয়েলের আকার ক্ষুদ্র বলে এদের
লালন পালনের জন্য বিস্তৃত জায়গা প্রয়োজন হয় না।
ছোট আকারের একটি খাচাতেই কোয়েল পালন
করা যায়। একটি মুরগির জন্য যে
পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন হয়।
সেই একই
জায়গা কমপক্ষে ৮টি কোয়েল পালন করা
যায়।
(৫) খুবই
অল্প সময়ের মধ্যে একটি
বাচ্চা কোয়েল ডিম দিয়ে থাকে। সাধারণত ৪০-৪৫ দিনে এরা ডিম পাড়া শুরু করে। বা ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সেই একটি
কোয়েল ডিম
প্রদান করে
থাকে।
(৬) রোগ
ব্যাধির দিকে
থেকে কোয়েল খুবই লাভজনক বিনিয়োগ। কারণ,
কোয়েলের রোগ
ব্যাধি প্রায় হয় না
বললেই চলে।
তিাই এদের কোন টিকা দরকার
হয় না।
(৭) একটি
পরিণত বয়সের কোয়েল বছরে ২০০- ২৫০টি ডিম প্রদান করতে পারে। সেই হিসেবে একটি কোয়েলের পেছনে যে
২ মাস থেকে লাভ আসতে শুরু
করে। এত কম সময়ে অন্য কোন পাখি ডিম পারে না।
(৮) কোয়েলের ডিম থেকে ১৮/১৯ দিনের মধ্যেই বাচ্চা ফুটে বের
হয়। এই
বাচ্চা পরিণত কোয়েলে রূপান্তরিত হতে সময়
লাগে ৪০/৪৫ দিন বা ৬ থেকে ৭
সপ্তাহ।
(৯) কোযেলের মাংসে ফেটের পরিমাণ খুব
কম বলে
যে কোন
রোগীর পথ্য
হিসেবে কোয়েলের মাংস ব্যবহৃত হতে পারে।
১০) এদের ডিম পুষ্টিকর। পুষ্টিমানের দিক
থেকে মুরগির ডিমের সমমানের।
কিভাবে কোয়েলের নর/ মাদি চিনবেন????
★নর কোয়েলঃ
সাধারণত পুরুষ কোয়েলের গলার নিচে সমান্তরাল বাদামী রঙয়ের হয়ে থাকে।এতে কাল ফোটা ফোটা ছোপ থাকেনা।
★মাদি কোয়েলঃ
মহিলা কোয়েলের গলার নিচে ও বুকে কাল কাল ফোটার মত ছোপ ছোপ থাকে।
উপরের ছবি তে নর ও মাদি কোয়েল চেনার উপায় ছবি দেখে নিন।
কোয়েলের খাদ্য বা খাবার ব্যবস্থা কোয়েলের জন্য আলাদা তেমন কোন
সুষম খাদ্যের প্রয়োজন হয়
না। শুধুমাত্র ডিম থেকে
বাচ্চা ফুটে
বের হবার
পর কিছুটা বিশেষ যত্ন
প্রয়োজন হয়।
এইসময় কোয়েলের বাচ্চাকে সুষম
খাদ্য প্রদান করতে হয়।
সাধারণভাবে একটি
পূর্ণাঙ্গ বয়সের কোয়েল দিনে
২০ থেকে
২৫ গ্রাম খাবার গ্রহণ করতে পারে। সাধারণভাবে হাঁস
মুরগির যে
খাবার সরবরাহ করা হয়ে
থাকে তার
মধ্যেই এই
ধরনের আমিষ
এবং ক্যালোরি বিদ্যমান। হাস
মুরগির জন্য
যে খাবার আনা হয়
তার থেকেও খাবার প্রদান করে কোয়েল পালন করা
যায়।
কোয়েল খুব
ঘন ঘন
পানি পান
করে। তাই
কোয়েলের খাচায় পানির ব্যবস্তা খাকতে হবে।
যাতে পানির পাত্র উপচে
বা উল্টে পড়ে কোয়েলের গা ভিজে
না যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।।
কোয়েলের স্বাস্থ্য রক্ষা ককুতর, টার্কি বা তিতিরের মতো কোয়েলেরও তেমন কোন
রোগ ব্যাধি নেই বললেই চলে। তবে
মাঝে মাঝে
কোয়েলকে রোগক্রান্ত হতে ধেখা
যায়। কোয়েল রোগাক্রান্ত হলে
সাথে সাথে
ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে
হবে।
কোন কোয়েল অসুস্থ হলে
সাথে সাথে
তাকে সুস্থ কোয়েলের খাঁচা থেকে সরাতে হবে। অসুস্থ্য কোয়েল
থেকে বাকি সুস্থ কোয়েলও আক্রান্ত হতে
পারে।
খাঁচায় কোন
কোয়েল মারা
গেলে সাথে
সাথে তার
কারণ খুঁজে তার প্রতিকার করতে হবে।
মরা কোয়েল পুড়িয়ে বা
পুতে পেলতে হবে।
কোয়েলের একটি রোগ হল আমাশয় ।
এই রোগ
হলে কোয়েলের ঘন ঘন
পায়খানা হয়,
খাবার গ্রহনে অনীহা দেখা
দেয় এবং
কোয়েলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে
থাকে। এই
অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এমাডিস বা
এম্বাজিন জাতীয় ঔষধ খাওয়ানো যেতে পারে।
লেখক:
আবদুল্লাহ আল
মামুন, উপ-পরিচালক, বংলাদেশ কৃষি
গবেষনা ইনস্টিটিউট। তাঁর মতে
সুষ্ঠুভাবে কোয়েল পালন করতে
হলে তাদের থাকার জায়গা বা বাসস্থান, খাবার জায়গা ইত্যাদি স্থানগুলো শুকনা এবং
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেই
সাথে প্রয়োজনীয় সুষমত খাদ্যের সরবরাহ রাখতে হবে। তবেই
কোয়েল পালন
করে তার
মাংস ও
ডিম উৎপাদনে সঠিক ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
বংশ বিস্তার কোয়েলের বয়স ৬৫ দিন হলে তারা বছরের প্রায় সব সময়ডিম উৎপাদন করে থাকে। স্ত্রী কোয়েল প্রতি ১৬
থেকে ২৪
ঘন্টায় ১টা
করে ডিম
পাড়ে। মাসে একটি মহিলা
কোয়েল ৩৬টি ডিম দিয়ে থাকে।
টানা ১২ মাস
তাদের ডিম
পাড়া অব্যাহত থাকে। শুধুমাত্র ডিম ফুটাতে চাইলে স্ত্রী কোয়েল প্রতিপালন অধিক লাভজনক। ডিমের উরবরতা ভালেঅ পেতে
হলে ৩:১, ৮:৩
বা ১০:৪ অনুপাতে স্ত্রী এবং পুরুষ কোয়েল একত্রে রাখতে হবে।
যাতে তারা মিলন করতে পারে
। মিলনের ৩য় দিন দিন থেকে যে আসবে তা থেকে বাচ্চা আসবে।তবে অর্থনৈতিক দিক দিক
বিবেচনা করে৫:১ অনুপাত অপেক্ষাকৃত ভাল ।
স্ত্রী কোয়েলের সাথে
পুরুষ কোয়েল রাখায় ৩/৪
দিন পর
থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য
ডিম সংগ্রহ করা উচিত
।
স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের আবহাওয়ায় কোয়েল ৬-৭ সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে।
৮-১০
সপ্তাহ বয়সে ৫০% ডিম
পাড়ে এবং
১২ সপ্তাহের পর থেকে
৮০% ডিম
পাড়ে। উপযুক্ত পরিবেশে প্রথম বছর গড়ে
২০০-২৫০টি ডিম ডিমের ফার্টিলিটি শতকরা ৮৫-৮৭ %।
৪৪০ দিন বা ৬০ সপ্তাহের অধিক বয়সের কোয়েলের ডিমের ফোটার হার কম।
কোয়েলের ডিমের গড় ওজন
১০-১২
গ্রাম এবং
গড়ে সারা
বছর শতকরা ৬০ ভাগ
ডিম দেয়। কোয়েল এক বাণিজ্যিক বছরের অধিককাল পালন করা
উচিত নয়
কারণ তখন
ডিম উৎপাদন খুবই কমে
যায়। আন্তঃপ্রজনন যাতে না
হয় সেজন্য নিকট সমপর্কযুক্ত কোয়েলের মধ্যে প্রজনন করানো
ইনকিউবেটরে
বসানোর আগে ডিমের যত্ন দিনে অন্তত দু'বার ফোটানোর ডিম
সংগ্রহ করতে
হবে এবং
১৫.৫০
সে তাপমাত্রায় ৮০% আর্দ্রতায় ৭-১০
দিন সংরক্ষণের জন্য ২০
মিনিট ফরমালডিহাইড গ্যাসে রাখতে হবে। কোয়েলের ডিমের খোসা
ভাঙ্গার প্রবণতা বেশি থাকায় ডিম অত্যন্ত সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হয়।
ডিম দূষিত হওয়ার প্রধান উৎস এবং
রোগ বিস্তারের মুখ্য কারণ
হচ্ছে ময়লাযুক্ত ইনকিউবেটর অথবা
হ্যাচারী এলাকা প্রতিবার ব্যবহারের পর প্রতিটি হ্যাচিং ইউনিট ভালভাবে ধৌত
করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
বাজারে যে
সমস্ত উন্নতমানের জীবাণুনাশক পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করে
জীবাণুমুক্ত করা
যেতে পারে। ময়লাযুক্ত ডিম
রোগ ও
জীবাণুর প্রধান উৎস। পরিষ্কার-পরিচছন্ন ডিম
বসাতে হবে।
বাচ্চা ফুটানোর ডিম কখনও
ধোয়া উচিত
নয়। ডিম
সংগ্রহ করার
পর ডিম
ফিউমিগেশন করা
উচিত অথবা
বিকল্প ইনকিউবেটরে ডিম বসানোর ১২ ঘন্টার মধ্যে ফিউমিগেশন করা উচিত।
কোয়েলের বাচ্চা ফোটানো স্বাভাবিক নিয়মে ১৭-১৮
দিনে উপযুক্ত পরিবেশে ডিম
হতে বাচ্চা ফুটে। অবশ্য তা প্রজাতি বা ইনকিউবেশন পদ্ধতির উপরও
নির্ভর করে।
বাণিজ্যিক কোয়েল ডিমে তা
দেয় না।
ফলে এদের
দিয়ে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব নয়। কোয়েলের ডিম সাধারণত কৃত্রিম উপায়ে ইনকুবেটর দিয়ে ফোটানো হয়।
সফলভাবে বাচ্চা ফোটানোর হার
বেশি পেতে
হলে ইনকিউবেটর নির্মাতার নির্দেশ সতর্কতার সাথে
পালন করতে
হবে। ইনকুবেটরের কিছু কিছু
মডেল শুধুমাত্র কোয়েলের ডিম
বসানোর জন্যই ডিজাইন করা
হয়। জাপানীজ কোয়েলের ডিম
মুরগীর ডিম
ফোটানোর জন্য
ব্যবহৃত ইনকুবেটরে ফোটানো যেতে
পারে তবে
ডিম বসানোর ট্রেগুলোতে কিছুটা পরিবর্তন আনা
দরকার। ডিমের মোটা অংশ
সেটিং ট্রেতে বসানো উচিত। নিয়মমাফিক কোয়েলের ডিম প্রথম ১৫ দিন
সেটিং ট্রেতে এবং পরবর্তী ৩ দিন
হ্যাচিং ট্রেতে দিতে হবে।
তাপমাত্রা ৯৮-১০১০ ফা এবং
প্রথম ১৫
দিন ৫০-৬০% আর্দ্রতা এবং
পরবর্তীতে ৬০-৭০% আর্দ্রতা রাখা
বাঞ্ছনীয় (ইনকুবেটর নির্মাতার নির্দেশ অনুসারে)।
প্রতি ২
থেকে ৪
ঘন্টা অন্তর ডিম ঘুরিয়ে (টার্নিং) দিতে
হবে যাতে
ভ্রূণ খোসার সাথে লেগে
না যায়। ১৫তম দিনে
ডিম সেটিং ট্রে থেকে
হ্যাচিং ট্রেতে স্থানান্তর করতে
হবে এবং
ডিম ঘুরানো বন্ধ করতে
হবে। ডিম
থেকে বের
হওয়া বাচ্চা ২৪-২৮
ঘন্টার মধ্যে ব্রুডার ঘরে
স্থানান্তর করতে
হবে।
কোয়েলের বাচ্চার ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা এবং যত্ন
সদ্য ফুটন্ত কোয়েলের বাচ্চা খুবই ছোট
থাকে। এক
দিন বয়সের কোয়েলের বাচ্চার ওজন মাত্র ৫-৭
গ্রাম থাকে। তাই ঠান্ডা বা গরম
কোনটাই তারা
সহ্য করতে
পারে না।
এমতাবস্থায় কাঙ্খিত তাপমাত্রা এবং
খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান অত্যন্ত সতর্কতার সাথে
বজায় রাখতে হবে। এ
সময় কোন
রকম ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা বা
কোন রকম
ধকল হলে
এর বিরূপ প্রভাব দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম
উৎপাদন এবং
জীবনি শক্তির থাকার উপর
পড়ে। বাচ্চাকে তাপ দেয়া বা ব্রুডিং সাধারণত দুই
পদ্ধতিতে করা
যায়। যেমনঃ খাঁচায় বা
কেইজে ব্রুডিং এবং মেঝেতে ব্রুডিং। যে
পদ্ধতিতেই তাপ
দেয়া হোক
না কেন
তাপমাত্রার প্রয়োজনীয়তা একই রকম।
প্রথম সপ্তাহে সাধারণত ৩৫০সে তাপমাত্রা দিয়ে ব্রুডিং আরম্ভ করা হয়
এবং এই
তাপমাত্রা প্রতি সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে ৩.৫০সে
কমিয়ে নিম্নলিখিত মাত্রায় আনতে
হবে।
উপরে যে
তাপের উল্লেখ করা হলো
তা হলো
ব্রুডারের তাপমাত্রা। থার্মোমিটারের সাহায্যে সরাসরি এই
তাপমাত্রা নিরূপণ করা যায়। তবে থার্মোমিটার ছাড়াও ব্রুডারের তাপ সঠিক
হয়েছে কি
না তা
ব্রুডারের বাচ্চার অবস্থান দেখে
বুঝা যায়। বাচ্চারা যদি
বাল্বের কাছে
জড়োসড়ো অবস্থায় থাকে তবে
বুঝতে হবে
তাপমাত্রা কম
হয়েছে। আর
যদি বাল্ব থেকে দূরে
গিয়ে থাকে
তবে বুঝতে হবে তাপমাত্রা অধিক। অন্যদিকে বাচ্চাগুলো যদি
চারিদিকে সমভাবে ছড়িয়ে থাকে
এবং স্বাভাবিক ঘুরাফেরাসহ খাদ্য পানি গ্রহণ করতে থাকে
তবে বুঝতে হবে পরিমিত তাপমাত্রা আছে।
বাংলাদেশে গরমের সময় দুই
সপ্তাহ এবং
শীতের সময়
তিন চার
সপ্তাহ কৃত্রিম উপায়ে তাপ
দিতে হয়।
গবেষণা থেকে
জানা যায়
যে, দুই
সপ্তাহ কেজে
ব্রুডিং করে
পরবর্তীতে মেঝেতে পালন করলে
মৃত্যু হার
অনেক কম
হয় এবং
বাচ্চার ওজন
অপেক্ষাকৃত বেশি
হয়। কোয়েলের মৃত্যুহার নির্ভর করে এদের
উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার উপর। ব্রুডিংকালীন পর্যাপ্ত তাপ
প্রদান করতে
না পারলে বাচ্চার মৃত্যুহার নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। কাজেই এ সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর বয়স্ক কোয়েলের মৃতু্যহার তুলনামূলকভাবে খুব
কম।
ইনকুবেটরে বাচ্চা ফোটার ২৪
ঘন্টার মধ্যে ব্রুডিং ঘরে
এনে প্রথমে গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি এবং
পরে খাদ্য দিতে হবে।
খাদ্যের সাথে
সাথে পর
পর তিনদিন গ্লুকোজ পানি
পান করতে
দেয়া ভাল।
তারপর এমবাভিট ডবি্লও এস
পানির সঙ্গে তিন দিন
সরবরাহ করতে
হবে। প্রথম সপ্তাহ খবরের কাগজ বিছিয়ে তার উপর
খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে
এবং প্রতিদিন খবরের কাগজ
পরিবর্তন করতে
হবে। এক
সপ্তাহ পর
ছোট খাবার পাত্র বা
ফ্লাট ট্রে
ব্যবহার করা
যেতে পারে। পানির পাত্রে বাচ্চা যাতে
পড়ে না
যায় সেজন্য মার্বেল অথবা
কয়েক টুকরা পাথর খন্ড
পানির পাত্রে রাখতে হবে।
সর্বদাই পরিষ্কার-পরিচছন্ন পানি
সরবরাহ করতে
হবে।
অন্যান্য পোল্ট্রির মত কোয়েলের জীবন চক্রকে তিনভাগে ভাগ
করা যায়। যেমনঃ বাচ্চা, বাড়ন্ত এবং
বয়স্ক। অনেকে আবার কোয়েলের জীবনচক্র সংক্ষিপ্ত বিধায় তাকে
শুধু বাচ্চা এবং বয়স্ক এই দুইভাগে ভাগ করেন। স্বাভাবিকভাবে ১-৩ সপ্তাহ বয়স
পর্যন্ত বাচ্চা বলা হয়।
৩-৫
সপ্তাহ বয়সের কোয়েলকে বাড়ন্ত এবং ৫
সপ্তাহের অধিক
বয়সের কোয়েলকে বয়স্ক বলে।
অধিকতর সহজ
ব্যবস্থাপনার জন্য
এই অধ্যায়ের কোয়েলের জীবন
চক্রকে দুই
ভাগে যেমনঃ ১-৩
সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চা এবং
তিন সপ্তাহের বেশি বয়েসের কোয়েলকে বয়স্ক কোয়েল বলে
অভিহিত করা
হয়েছে।
খাবার পাত্র
বাচ্চা:ছোট কোয়েলের জন্য ফ্লাট ট্রে বা
ছোট খাবার পাত্র দিতে
হবে যেন
খাবার খেতে
কোনো রকম
অসুবিধা না
হয়। **২৮টি বাচ্চার জন্য
একটি খাবার পাত্র যার
দৈর্ঘ্য ৫০৩
সেমি, প্রস্থ ৮ সেমি
এবং উচ্চতা ৩ সেমি। **৩৪ টি
বয়স্ক কোয়েলের জন্য একটি
খাবার পাত্র যার দৈর্ঘ্য ৫৭ সেমি
প্রস্থ ১০
সেমি এবং
উচ্চতা ৪
সেমি। দিনে দুইবার যথা
সকালে এবং
বিকালে পরিষ্কার খাবার পাত্রে পিছু
দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে।
উল্লেখ্য প্রথম সপ্তাহ থেকে
৫ গ্রাম দিয়ে শুরু
করে প্রতি সপ্তাহে ৫
গ্রাম করে
বাড়িয়ে ২০-২৫ গ্রাম উঠিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রতিটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১.২৫ থেকে ২.৫ সেমি (১/২ থেকে ১
ইঞ্চি) খাবার পাত্রের জায়গা দিতে হবে।
পানির পাত্র সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানি
সরবরাহ করতে
হবে। প্রতিটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ০.৬ সেমি (১/৪ ইঞ্চি) পানির পাত্রের জায়গা দিতে হবে।
অটোমেটিক বা
স্বাভাবিক যে
কোনো রকম
পানির পাত্র ব্যবহার করা
যেতে পারে। প্রতি ৫০টি
কোয়েলের জন্য
একটি পানির পাত্র দেয়া উচিত।
অনেকে নিপেল ব্যবহার করে এ ক্ষেত্রে প্রতি ৫টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য
১টি নিপল
বা কাপ
ড্রিংকার ব্যবহার করা যেতে
পারে।
আলোক ব্যবস্থাপনা কাঙ্খিত
ডিম উৎপাদন এবং ডিমের উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য দৈনিক ১৪-১৮
ঘন্টা আলো
প্রদান করা
প্রয়োজন। শরৎকাল এবং শীতকালে দিনের আলোক
দৈর্ঘ্য কম
থাকে তাই
কৃত্রিম আলোর
ব্যবস্থা করা
হয় ।
পুং কোয়েল, যেগুলো প্রজনন কাজে এবং
শুধুমাত্র মাংস
উৎপাদনের জন্য
ব্যবহার করা
হয় সেগুলোর জন্য দৈনিক ৮ ঘন্টা আলোকই যথেষ্ট। প্রাকৃতিক আলোর
সাথে কৃত্রিম আলোর সমন্বয় করে নিম্ন সারণী মোতাবেক আলো দিলে
কাঙ্খিত ডিম
উৎপাদন সম্ভব।
বয়স অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আলোর
ব্যবস্থাপনা