পানি ছাড়া খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন
হাঁস চাষে বা
পালনে নিঃশব্দ বিপ্লব
নিয়ে এসেছে খাঁকি
ক্যাম্পবেল হাঁস, কেউ
আগে কল্পনা ও
করেনি হাঁস মুরগির
চেয়ে বেশি ডিম
দেয় বা দিতে
পারে..!! হাঁস থেকে
রীতিমত ব্যবসা করা
যায়। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস
এই বিপ্লব নিয়ে
এসেছে।
.
বিভিন্ন সরকারী ও
বেসরকারী ব্যাংক দারিদ্র্য সীমার
নিচের মানুষদের ওপরে
তোলার জন্য খাঁকি
ক্যাম্পবেল হাঁস চাষের
জন্য অনুদান এবং
ঋণ প্রদান করছে।
মুরগির থেকে হাঁস
পালনে সুবিধা অনেক
বেশি। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস
বছরে ২৮০-৩০০
ডিম দেয়। মুরগি
দেয় এর কিছু
কম। হাঁস ব্যবসায়ের উপযোগী
এক নাগাড়ে ২/৩ বছর
ডিম দিয়ে যাবে
কিন্তু উন্নত জাতের
দো-আঁশলা মুরগি
লাভের খাতিরে ডিম
দেবে মোটে দেড়
বছর। খাঁকি ক্যাম্পবের বাচ্চা
মাদি ১৭ থেকে
১৮ সপ্তাহে ডিম
দেয়। কিন্তু উন্নত
জাতের মুরগি ২১
সপ্তাহের আগে লাভজনক
ভাবে ডিম দেয়
না। আরো সুবিধা
হলো- মুরগি সারাদিনে যে
কোন সময় ডিম
দিতে পারে। হাঁস
সন্ধ্যা রাত থেকে
সকাল নয়টার মধ্যে
যা ডিম দেবার
দিয়ে দেবে। এই
কারণে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস
পোষায় পরিশ্রম কম।
.
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের সুবিধাঃ-
১. বছরে ২৮০-৩০০টি ডিম
দেয়। ২-৩
বছর বয়স পর্যন্ত ডিম
দেয়, সেখানে লেয়ার
মুরগি ডিম দেয়
দেড় বছর পর্যন্ত।
২. সবাই হাঁসের
ডিম খেতে পছন্দ
করেন।
৩. হাঁসের বাচ্চার দাম
খুব কম ১২
টাকা সেখানে মুরগির
বাচ্ছার দাম ৬০-৬৫ টাকা।
৪. হাঁসের ডিমের
সাইজ বড়।
৫. ১ হাজার
মুরগির চেয়ে ১
হাজার হাঁস পালন
করলে বেশি লাভবান
হওয়া যাবে।
৬. ডিম উৎপাদন
কমে গেলে ৩
বছর পর হাঁসগুলো মাংস
হিসেবে বাজারে বিক্রি
করা যাবে। হাঁসের
মাংস
মুরগির চেয়ে সুস্বাদু।
৭. মুরগি সব
দিন ধরে ডিম
দেয় কিন্তু হাঁস
সকাল ৯টার মধ্যে
ডিম পাড়া শেষ
করে। ফলে নজরদারির খরচ
কম লাগে।
৮. খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস
১৭-১৮ সপ্তাহ
বয়সেই ডিম দেয়।
৯. নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা
ও ফেনী সরকারি
হাঁস প্রজনন খামার
থেকে ১ দিনের
বাচ্চা সংগ্রহ করা
যাবে।
.
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বৈশিষ্ট্যঃ-
উৎপত্তি : ইংল্যান্ডে, পালকের
রঙ খাকি, মাথা
এবং ঘাড় ব্রোঞ্জ রঙের,
দেহের আকার মাঝারি-
১.৫-২
কেজি, পা এবং
পায়ের পাতায় রঙ
হাঁসার হলুদ, হাঁসীর
কালো। ঠোটের রঙ
হাঁসা নীলাভ, হাঁসী
কালো, ডিম দেয়
২৫০-২৭০টি বছরে।
হাঁসের
বাসস্থান
মুরগির মতো ততো
ভালো বাসস্থান না
হলেও চলে। আলো
বায়ু চলাচল ভালো
থাকতে হবে। বয়স্ক
হাঁসপ্রতি
জায়গা লাগবে ২-৩ বর্গফুট। উঠতি
হাঁসা-হাঁসীর জন্য
১ বর্গফুট জায়গাই
যথেষ্ট। বন্য জন্তু
বিশেষ করে শেয়ালের হাত
থেকে রৰার ব্যবস্থা করতে
হবে। থাকার জায়গায়
মুরগির লিটারের মতো
বিচুলি, তুষ, কাঠের
গুঁড়া বিছিয়ে দিতে
হবে, এতে আরামে
থাকবে পাখিগুলো, ডিম
গড়িয়ে যাবে না,
ভাঙবে না। বাচ্চা
তোলার আগে আপনার
প্রথম কাজ হবে
বাচ্চা যেখানে থাকবে
সেটা ঠিক-ঠাক
করা। বাচ্চা হাঁস
রাখতে হবে তারের
জালের ওপর। এতে
বাচ্চারা কম রোগ-ব্যাধিতে ভোগে।
তারের জাল মেঝে
থেকে দেড়ফুট মতো
উঁচুতে থাকবে। ফলে
মল মুত্র সহজে
অন্য কোথাও সরিয়ে
নেওয়া যাবে।
বয়স (সপ্তাহ) মেঝেতে জায়গার পরিমাণ
০-১
৪ ভাগের
১ বর্গফুট
১-২
৩ ভাগের
১ বর্গফুট
২-৩
২ ভাগের
১ বর্গফুট
৩-৭
দেড় বর্গফুট।
.
পানি ছাড়া হাঁস পালনঃ-
খাঁকি
ক্যাম্পবেল
হাঁস: পানিতে
সাঁতার দেবার কোন
দরকার হয় না।
বরঞ্চ সাঁতার কাটলে
ডিমের পরিমাণ কমে যেতে
পারে। তবু যারা
পানির জন্য নালা
করতে চান তারা
নালা করবেন এইভাবে-
ঘরের সমান লম্বা,
১৫”
চওড়া এবং ৯”
গভীর নালা। ৩/৪ সপ্তাহ
পরে হাঁকে পানিতে
ছাড়া যেতে পারে।
তবে সেটা আবহাওয়ার ওপর
নির্ভর করবে।
উক্ত নালায় পানি
সরবরাহ করার সময়
মনে রাখতে হবে-
সেই যেন প্রতিদিন একবার
অন্তত বদলানো যায়।
অনেক সময় এই
কাজটি করা বেশ
কষ্টকর বলে মনে
হয়। কারন বদ্ধ
খামারের নালা থেকে
পানি পরিষ্কার করে
নতুন পানি সরবরাহ
করা শুধু কষ্টকর
নয় বরং বেশ
পরিশ্রমের কাজ। কিন্তু
এই কাজটি না
করা হলে হাঁস
রোগাক্রান্ত হলে পড়তে
পারে। মনে রাখতে
হবে, খাঁকি ক্যাম্পবেল অতি
উন্নত ধরনের হাঁস।
নোংরা পানিতে কেলি
করলে ব্যাধি হতে
পারে। তার চেয়ে
পানি না দেওয়া
ভালো। এই কারনে
খামারের মধ্যে একান্ত
যদি নালা রাখা
প্রয়োজন হয় তবে
নালার পানি দিনে
অন্তত একবার পাল্টে
দিতেই হবে। পুকুর
বা জলাশয়ে খোলা
জায়গায় হাঁস পুষলে
এই সমস্যা যদি
ও থাকে না।
কারণ সেখানে প্রতিনিয়ত পানি
পাল্টে দেবার সমস্যা
নেই। তবু ও
নিরাপত্তার খাতিরে এমন
খোলাভাবে হাঁস চাষে
অনেকেরই আপত্তি।
বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় উত্তাপ
প্রথম অবস্থার জন্য
ক্যাম্পবেল হাঁস বাচ্চার জন্যে
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার
প্রয়োজন হয়। জীবনের
প্রথম কয়েক দিন
ওদের তাপ দিতে
হবে ৩০০ সেঃ
(৮৫০ ফাঃ) থেকে
৩২০ সেঃ (৯০০
ফাঃ) তারপর প্রতিদিন ২.৮০ সেঃ।
(৫০ ফাঃ) করে
তাপ কমিয়ে আনতে
হবে যতদিন না
২৪০ সেঃ (৭৫০
ফাঃ) তাপমাত্রা হাচ্ছে। ২০
থেকে ২৫ দিনের
মধ্যে হাঁসকে মেঝেতে
ছাড়া যেতে পারে।
মেঝেতে ছাড়ার আগে
হাঁসের জন্য পুরু
স্তরের বিছানা পেতে
দিতে হবে (Deep litter) বিছানা তৈরি
করা যাবে ৫”
গভীর তুষ আর
কাঠের গুঁড়ো ছড়িয়ে।
বাচ্চার
খাদ্য
প্রতি লিটার পানিতে
৮০ গ্রাম গৱুকোজ
৪ গ্রাম ভিটামিন সি
মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
৩ সপ্তাহ পর্যন্ত হাঁসের
বাচ্চাকে পানিতে ছাড়া
যাবে না।
হাঁসের
খাবার
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস
পুকুর/ জলাশয়ে ছেড়ে
পুষলে খাবারের অনেক
সাশ্রয় হয়। কারণ
হাঁস তখন জলজ
উদ্ভিদ কীট- পতঙ্গ,
মাছের ডিমপোনা, গুগলি,
শামুক, গেড়ি খেয়ে
বেড়ায়। কিন্তু ঘেরার
মাঝে হাঁস পালন
করলে তখন তাকে
পুরো খাবারই খাওয়াতে হবে।
পুরো ৮ সপ্তাহের জন্য
হাঁস পিছু লাগবে
৪/৫ কেজি
সুষম খাদ্য এবং
২০ সপ্তাহ পর্যন্ত সেটা
দাঁড়বে সাড়ে বরো
কেজি। পুর্ণবয়ষ্ক হাঁস
হড়ে দিনে ১৩০
থেকে ১৫০ গ্রাম
সুষম খাদ্য খায়।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসকে
সর্বদা সুষম খাদ্য
ভিজিয়ে খাওয়াতে হবে।
এই ব্যবস্থায় খাবারের অপচয়
কম হয় এবং
হাঁস চট করে
গিলে নেয়। খাঁকি
ক্যাম্পবেল হাঁসের দৈনিক
খাবার দেওয়ার হার
নিচে দেয়া হলো।
০-৪ সপ্তাহ
– দৈনিক ৪ বার।
৪-৮ সপ্তাহ
– দৈনিক ৩ বার।
৮ সপ্তাহের উপর
– দৈনিক ২ বার।
খাবার জায়গার পরিমাণ
০-২ সপ্তাহ
আধা ইঞ্চি বাচ্চা
প্রতি।
২-৪ সপ্তাহ
১ ইঞ্চির ৪
ভাগের ৩ ভাগ
বাচ্চা প্রতি।
৪-৭ সপ্তাহ
দেড় ইঞ্চি বাচ্চা
প্রতি।
হাঁসের
সুষম খাবারের তালিকা
ঠিক সময়ে ডিম
পাওয়ার জন্য ক্যাম্পবেল হাঁসের
সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। খামারকারী নিজেও
এই সুষম খাদ্য
নিজে তৈরি করে
নিতে পারে। এতে
দামে যেমন সস্তা
হয়, এবং নিজেও
প্রচন্ড বল পেতে
পারেন যে তিনি
তাঁর
হাঁসকে ভাল খাবার
খাইয়াছেন। সুষম খাদ্য
তৈরির নিয়ম নিচে
দেয়া হলো-
প্রতি ১০০ ভাগ
খাবারের মধ্যে-
গম – ৩০ ভাগ;
ধান ভাঙ্গা – ৪০
ভাগ;
কালো তিল খোল
– ১০ ভাগ;
সয়াবিন খোল – ১০
ভাগ;
শুঁটকি মাছের গুঁড়ো
– ৮ ভাগ;
ঝিনুক ভাঙ্গা – ২
ভাগ।
ভিটামিন এ, বি২,
ডি৩, ই, কে
প্রতি ১০০ কেজি
খাবারের ১০ গ্রাম
মেশাতে হবে।এবং প্রতি
কু্যইন্টাল হিসেবে
কোলিন ক্লোরাইড দিতে
হবে ৫০ গ্রাম।
হাঁস ৬_৮
সপ্তাহ হলে গমের
পরিমান কমিয়ে ছত্রাক
মুক্ত মেশানো যেতে
পারে। কোলিন ক্লোরাইড যেমন
দিতে হবে বৃদ্ধির জন্য
তেমনি ককসিডিয়া রোড়
বন্ধ করার জন্য
দিতে হবে ককসিডিওস্ট্যাট। ককসিডিওস্ট্যাট দিতে
হবে হাঁসের ১২
সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত। মেশাবার হার
প্রতি ১০০ কেজি
খাবারের জন্য ৫০
গ্রাম। হাঁসকে গুগলি
দিলে শুঁটকি মাছের
পারিমান কমিয়ে দিতে
হবে। এতে খাবারের দাম
ও কমে যাবে।
প্রতিষোধক
ব্যবস্থাঃ-
৩ সপ্তাহ বয়সে
: বুকের মাংসে ১
সষ ডাক পেৱগ
টিকা। ১৫ দিন
পর : পুনরায় বুকের
মাংসে ডাকা পেৱগ
টিকা। ৭০ দিন
বয়সে : কলেরার টিকা
১/স অথবা
ং/প। ১৩০
দিন বয়সে : ওই।
.
খামারের
আয়-ব্যয়ের হিসাবঃ-
১. স্থায়ী খরচ
: ক. জমি নিজস্ব
খ. লেয়ার সেড
২৫০টি হাঁসীর জন্য
৭৫০ বর্গফুট। প্রতি
বর্গফুট ১০০ টাকা
হিসাবে ৭৫০০x১০০=
৭ হাজার ৫০০
টাকা। গ. ব্র্বডার, খাদ্য
ও পানির পাত্র
২০০০ হাজার টাকা।
২. চলতি খরচ
:
ক.
বাচ্চা ক্রয় ৫০০x১২= ৬
হাজার টাকা।
খ. ম্যাস খাদ্য
৫০ হাজার টাকা।
গ.
আনুষঙ্গিক খরচ ২৫
হাজার টাকা।
ঘ.
অপ্রচলিত খাদ্য ২৫
হাজার টাকা।
মোট খরচ ১
লাখ ৮৩ হাজার
টাকা।
আয় : ৫%
মৃত হাঁস বাদে
৫০০-২৫= ৪৭৫টি
হাঁস।
ক.
২২৫টি হাঁসা বিক্রি
বাবদ আয় ২২৫x১০০ = ২২
হাজার ৫০০ টাকা।
খ. ২৩০টি হাঁসী
থেকে শতকরা ৭০টি
ডিম। উৎপাদন (১৮
মাসে) মোট ডিম
৮৬ হাজার ৯৪০টি
x৫= ৪ লাখ
৩৪ হাজার ৭০০
টাকা। গ. ২৪৫টি
(২৩০+১৫টি হাঁসা)
বাতিল হাঁস বিক্রি
২৪৫x১০০= ২৪
হাজার ৫০০ টাকা।
মোট আয়: ৪ লাখ
৮১ হাজার ৭০০
টাকা।
নিট লাভ : মোট আয়-মোট খরচ
৪ লাখ ৮১
হাজার ৭০০-১
লাখ ৮৩ হাজার
= ২ লাখ ৯৮
হাজার ৭০০ টাকা।:
বাচ্চা প্রাপ্তির স্থান:
দেশের সর্ববৃহৎ হাঁস
খামার নারায়নগঞ্জ, ফজলুল
হক মোঃ নংঃ
– ০১৭১২০৪৪৮৬২, এরপর গোপালগঞ্জ: ০১৭১১২২০৪৩০, কেন্দ্রীয় হাঁস
প্রজনন খামার, দৌলতপুর, খুলনা
০৪১৭৬২৪১৮, ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভার ৭
নম্বর ওয়ার্ডের চরছান্দিয়া গ্রাম,
এছাড়াও কিশোরগঞ্জের একজন
ব্যক্তিগত খামারি সোহাগ,
০১৭৯৮৪৪১৮৮।